♦ঈদ বা উৎসব কি ?
ঈদ অর্থ হল কোন দিবস বা স্থানকে কেন্দ্র করে জনসমাগম বা কোন কর্ম সম্পন্ন হওয়া ফুজাইল বিন আয়াজ রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, ঈদকে ঈদ বলা হয় কারণ এটা বারবার ফিরে আসে এবং মানুষের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে। ইবনে আবেদীন রহ. বলেন, ঈদের নামকরণ হওয়ার কারণ হল, ঈদ সমূহে প্রতিবার মানুষের ব্যাপারে বিভিন্ন অনুগ্রহ আসে। যেমন রোজায় খাবার বন্ধ থাকার পরে খাবারের সুযোগ হওয়া, সাদকাতুল ফিতর, কোরবানির দিনে জিয়ারতে তাওয়াফের মাধ্যমে হজের সমাপ্তি, কোরবানির গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি। আর এরকম আনন্দ খুশির উপকরণ বারবার ঘুরেফিরে আসতে থাকে। তাই ঈদকে ঈদ বলে।
♦ উৎসব একটি জাতির আত্মপরিচিতি
অস্তিত্বের জন্য একটি জাতির আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচিতি অপরিহার্য। জাতির আত্মপরিচিতির ক্ষেত্রে যে সমস্ত উপাদান ঐতিহাসিক উৎপাদক হিসেবে কাজ করে, তার মধ্যে উৎসব একটি। উৎসব একটি জাতির সকল সদস্যকে একত্রে গ্রথিত করে তাদের একানুভূতিকে নবায়িত ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।
♦ উৎসবের পাঁচ উপাদান
বিশ্বজুড়ে উৎসব পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে এর রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি উপাদান। সাজসজ্জা, সম্মেলন, শুভেচ্ছা, সম্পাদন ও ভোজ। তার যোগফলে সৃষ্ট হয় সামাজিক আনন্দ যা কখনো ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। উল্লেখিত এই পাঁচটি উপাদান ছাড়া উৎসব হয় না। নীচে এই পাঁচটি উপাদান ঈষৎ বিশদে বর্ণিত হল।
(এক)
সাজসজ্জা হচ্ছে বাহ্যিক উপকরণ সহযোগে সাধারণ রুপের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। সাজসজ্জা সাধারণত ইতিবাচক। উৎসবে ব্যক্তির চেহারায়, পোশাকে, আবাসে ও পরিবেশ যে ইতিবাচক রুপবর্ধক পরিবর্তন করা হয় তার সবটুকু মিলিয়েই উৎসবের সজ্জা গঠিত হয়। উৎসবে ব্যক্তির চেহারায়, পোশাকে, আবাসে ও পরিবেশ যে ইতিবাচক রুপবর্ধক পরিবর্তন করা হয়, তার সবটুকুই মিলিয়েই উৎসবের সাজসজ্জাগঠিত হয়। সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ইসলাম সাপ্তাহিক ঈদে শুক্রবার ও বাৎসরিক দুই ঈদে সবচেয়ে সুন্দর জামা পরিধান এর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আর তাই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বাজারে বিক্রি হওয়া ‘ইসতাবরাক’ এর পোশাক নিয়ে রাসুল (সা.) এর কাছে আসলেন এবং বললেন, এ পোশাকটি ক্রয় করুন যাতে দুই ঈদে ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা করতে পারেন। রাসুল (সা.) তখন বললেন এটা তাদের পোশাক, যাদের আখেরাতে কোন অংশ নেই। রাসুল (সা.) এর যুগে ঈদে ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে সাধারণ রীতি ও স্বীকৃত সংস্কৃতি ছিল বলে ওমর (রা.) ভালো পোশাক নিয়ে এসেছেন ও রাসুল (সা.) ও সম্মতি প্রদান করতেন এবং গ্রহণ করতেন যদি না সেটা অতি বিলাসী পোশাক না হতো।
(দুই)
সম্মেলন হচ্ছে গণ-অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎসবের কেন্দ্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কোন স্থানে সমস্ত মানুষের একত্রে সমাগম। এছাড়াও উৎসবের ব্যাপ্তিকালে বিভিন্ন পরিসরে সম্মেলন সংঘটিত হয়। উৎসবের সম্মেলন বলতে এর সবগুলোকেই বুঝানো হয়েছে।
(তিন)
শুভেচ্ছা হচ্ছে উৎসব উপলক্ষে অন্যের সঙ্গে নিজের সুখ ও আনন্দ বিনিময়ের উপায়। এর প্রকাশ হতে পারে শব্দে, স্পর্শে এবং উপহারসামগ্রীর মাধ্যমে। শুভেচ্ছাপত্র, অভিবাদন, আলিঙ্গন, চুম্বন উপঢৌকন ইত্যাদি হচ্ছে শুভেচ্ছার উদাহরণ।
(চার)
সম্পাদন বলতে বুঝায় উৎসবের ক্রিয়াকান্ডের সংঘটন। এ ক্রিয়াকান্ডের মধ্যে কিছু আছে লক্ষ্য আর কিছু উপলক্ষ। লক্ষ্য কান্ড সরাসরি আনন্দের উৎস। কিন্তু উপলক্ষ-কান্ড তা নাও হতে পারে। সাধারণত উপলক্ষ কান্ডে সক্ষিপ্ত কিন্তু লক্ষ্য কান্ড বিস্তৃত।
(পাঁচ)
ভোজ হচ্ছে অনেকে মিলে একত্রে উৎসবী খাবার খাওয়া, যা দৈনন্দিন খাদ্যের চেয়ে ভিন্ন ও আকর্ষণীয়। প্রাণী মাত্রই খাদ্যে আনন্দ লাভ করে। সুতরাং প্রাণী হিসেবে মানুষের আনন্দ খাদ্য বর্জিত হতে পারে না। তবে এই ভোজ হতে হবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে, অপচয় এর শামিল নয়।
এ পাঁচটি উপাদান ধারণ করে সর্বজনীন অর্থাৎ সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য উৎসব হল রোজা ও কোরবানির ঈদ। মুসলিম জাতির আইডেন্টিটি ও আত্মপরিচয় সঙ্কটের যে কথা বলা হয় তার সঙ্গে সর্বজনীন উৎসব গড়ে না ওঠার একটা সম্পর্ক থাকা সম্ভব।
♥ অন্ধকার যুগের উৎসব এর পরিবর্তে দুই উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা♥
হযরত আনাস বিন মালিক রা. বলেন অন্ধকার যুগের লোকদের বছরে দুটি উৎসবের দিবস ছিল। যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। অতঃপর যখন রাসুল (সা.) মদিনায় আসেন তখন বললেন, অন্ধকার যুগে তোমাদের দুটি দিবস ছিল। যাতে তোমরা খেলাধুলা করতে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে ঐ দুইটি দিবসের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিবস প্রদান করেছেন। আর সেটা হল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিবস।
হযরত শাইখুল ইসলাম রহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন; ইসলাম অন্ধকার যুগের প্রচলিত উৎসবের এই দুইটি দিবসকে সমূলে উৎপাটন করেছে। এর কোন চিহ্ন রাসুল (সা.) খোলাফায়ে রাশেদীন বা তাবেঈনদের যুগে অবশিষ্ট থাকেনি। রাসুল (সা.) যদি সেগুলোতে উৎসব করতে নিষেধ না করতেন তবে মানুষ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখত।
..
মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
০২/০৫/২০২২