জামি'আ সিরাজুল উলুম ইব্রাহিমিয়াজামি'আ সিরাজুল উলুম ইব্রাহিমিয়া
জামি'আ সিরাজুল উলুম ইব্রাহিমিয়া

বিদায়ী বাণী

এপ্রিল ০৮, ২০২২Uncategorized
বিদায়ী বাণী

প্রারম্ভিকা :

ইলমে ইলাহী ও রিসালাতের অমীয় খুশবুতে বিমোহিত হয়ে প্রায় এক যুগেরও অধিক পূর্বে আমরা এসেছিলাম এই সুভাসিত ইলমী কাননে।

নশ্বর পৃথিবী নামক জগতের চোরাবালিতে স্থাপিত জাগতিক কোন শিক্ষা কেন্দ্রে যাইনি আমরা।

ভীড় জমাইনি আমরা মন ভূলানো কারুকার্য খচিত কোন বিদ্যালয়ে। ছোটাছুটি করিনি পার্থিব মরিচিকার পিছনে। একান্ত আপন করে নিয়েছি ইলমে দ্বীনকে।

তাই জীবন তরীকে ইলমে ওহীর স্বর্ণজ্জল জ্যোতিস্কে উদ্ভাসিত করার লক্ষে শিশির ভেজা এক সুন্দর প্রভাতে জড়ো হয়েছিলাম আমরা এই ইলমী কাননে।

এমনই করে কালের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে একটি যুগ।

এভাবে রাত-দিন, সপ্তাহ ও মাস পেরিয়ে ষড়ঋতুর চক্ররথে চড়ে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। মহাকালের দেয়ালে উঠেছে আরেকটি নতুন পাতা।

এই ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের বিদায়লগ্ন উপস্থিত।

হেজাযী কাফেলার পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরাও আজ নির্বাক হয়ে গুটিয়ে নিচ্ছি আপন তাবু।

নির্বাক বিদায়ের নিষ্ঠুরতম আঘাত আমাদের হৃদয়কে করে দিচ্ছে ক্ষতবিক্ষত ও ছিন্নভিন্ন। বিদায়ী এই কাফেলার করুন আর্তনাদে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর সমগ্র সৃষ্টিই যেন আজ নীরব, নিস্তেজ ও নিস্তব্ধ।

পূর্নিমার রজনী যেন তার আলোর স্নিগ্ধতা হারিয়ে আঁধারে ছেয়ে গেছে। প্রবাহমান ঝর্ণা যেন শুকিয়ে মরুভূমির আকার ধারণ করেছে। এমন একটি কঠিন মূহুর্ত! তা কি কিছু প্রাণহীন বর্ণমালায় ব্যক্ত করা যায় ? এমন একটি করুন চিত্র ! তা কি প্রাণহীন কাগজে চিত্রায়িত করা যায় ? হৃদয়ের স্পন্দন ! সেতো কেবল হৃদয় দিয়েই অনুভব করা যায়।

মাতৃতুল্য হে প্রাণ প্রিয় জামি‘আ :

মিথ্যা ও অসত্যের দাবানলে বিশ্ববিবেক আজ স্তব্ধ। সন্ত্রাস দমনের ধোঁয়া তুলে ভূয়া অজুহাতে সারা বিশ্বে চলছে নির্বিচারে মুসলিম নিধন।

ডুকরে ডুকরে কেঁদে অসহায় মানবতা পাচ্ছে না কিঞ্চিৎ ঠাঁই, সৎ পন্থায় প্রতারণা চলছে অহর্নিশ।

আমাদের প্রাণ প্রিয় হে বিদ্যাপীঠ, জাতির এই নাজুক পরিস্থিতিতে ইলমে ওহীর প্রদীপ্ত মশাল হাতে হেরা জ্যোতিবাহী দুর্গ ও সত্যের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাড়িঁয়ে আছ তুমি।

মানুষ তোমাকে ইট-পাথর আর কাঠের তৈরী ভবনসমষ্টি মনে করে। কিন্তু আমরা বলব! যদি তুমি তাই হতে তাহলে তোমার সাথে আমাদের এই নিবিড় বন্ধন কিসের ?

কেন আমরা তোমার প্রতিটি কণা থেকে শুনতে পাই “যেওনা বন্ধু যেওনা”

তুমি স্থায়ী হবে, সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করবে, সুখ্যাতি তোমার ছড়িয়ে পড়বে দিক-দিগন্তে। তাই এই বিদায় ক্ষণে বেদনার করুন সুরে তোমায় বলব-

ছালাম লওগো হে জামিয়া যাচ্ছি তোমায় ছেড়ে —- বিদায় ব্যাথায় ঝরছে বারি নয়ন-হৃদয় জুড়ে।
শেষ বিচারে মালিক যখন ডাকবেন মোদের একা —- বন্ধু হয়ে সেদিনও তুমি দিও মোদের দেখা।

আলোর পথের রাহবার হে শ্রদ্ধাভাজন আসাতিজায়ে কেরাম :

আজ বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অশ্রু সজল নয়নে নিষ্ঠুর বিদায় লগ্নে কি দিয়ে যে আপনাদের সম্মান করব তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

বুক ভরা আশা নিয়ে পিঁপাসায় কাতর হয়ে পতঙ্গের ন্যায় ছুটে এসে্ছিরলাম এ মনভোলা মহুয়া বনে। এসে বঞ্চিত হইনি একটুও।

আপনারা আমাদের জড়িয়ে নিয়েছিলেন ভালবাসার কোমল পরশে। আর কেবল অঞ্জলী ভরেই দেননি, দিয়েছেন মন উজাড় করে। আপনাদের স্নেহ-প্রীতি ছিল পিতা-মাতর চেয়েও উর্ধ্বে।

শাসন ছিল রহমত, আর কঠোরতা ছিল আশির্বাদ। আমাদের হৃদয়কে ইল্মে ওহীর স্বর্গীয় আলোকচ্ছাঁয় উদ্ভাসিত করে তুলতে আপনাদের ছিল অতুলনীয় পরিশ্রম।

সাধ্যের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাদের মোটেই কার্পণ্য ছিল না।

কিন্তু নির্বোধ এই আমরা হেলায়-খেলায়, বেলায়-অবেলায় দিয়েছি আপনাদের সিমাহীন কষ্ট, তবুও বিন্দুমাত্র বিরক্ত হননি কখনো।

তাই বিদায় মূহুর্তে আমরা আপনাদের কাছে অপরাধীর কাঠগড়া থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।

বিদায় মুহুর্তে সব কিছু ভূলে আমাদেরকে ক্ষমা করে আপন সন্তান রুপে বুকে টেনে নিবেন।

“কত অপরাধ করেছি মোরা, কত ব্যাথা দিয়েছি মনে —- বিদায় বেলা ভূলে যাবেন সব, রাখবেন না হৃদয়ের কোণে”

মমতাসিক্ত স্নেহের হে ছোট ভাইয়েরা :

পুষ্পের সৌরভে সুশোভিত ঐতিহ্যবাহী এই জামি‘আ। ইলমে ইলাহীর এই পুষ্প কাননে আমরা ছিলাম একই মায়ের সন্তানের মত ভ্রাতৃত্বের সুতোয় গাঁথা।

অতিবাহিত করেছি তোমাদের সাথে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি। শিক্ষা সফরে সঙ্গী ছিলাম একে অপরের আনন্দ ও বেদনায়। আশ্রয় গ্রহন করেছিলাম একই বৃক্ষের শীতল ছায়ায়।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! হঠাৎ বজ্রধ্বনির মত আঘাত হানলো বিদায়ের নিষ্ঠুরতম আওয়াজ। যা ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত করে তুলেছে আমাদের অন্তরাত্মাকে বন্ধু হে ! কালের খেয়ায় চড়ে আমরা অগ্রজ হয়েছি ঠিকই, কিন্তু বড় হিসেবে আমাদের প্রতি তোমাদের কর্তব্য তোমরা যথাযথই পূরণ করেছ, বরং দিয়েছ তার চেয়েও বেশি।

পক্ষান্তরে আমাদের অসদাচরন তো তোমাদের কাছে স্পষ্ট, কখনো আবেগের বশবর্তী হয়ে ইচ্ছায়, আবার কখনো মনের অজান্তে তোমাদের কোমল হৃদয়ে দিয়েছি অনেক যাতনা।

এই অনুশোচনায় আজ হৃদয় বিদীর্ন হওয়ার উপক্রম। অন্তরের অন্তস্থলের এই কথাগুলো তোমরা তখনই অনুধাবন করতে পারবে, যখন তোমরাও আমাদের মত এই পথের পথিক হবে।

করুণাময় হে প্রভূ :

দাও আমাদের হিম্মত যেন পৌঁছতে পারি সাফল্যের সু-উচ্চ শিখরে। কায়েম রাখ এই শিক্ষা নিকেতন যুগ যুগ ধরে। “আমীন”

..

বিদায় ধ্বনি তিক্ত অতি চরম কঠিন বাস্তবতা,
তাই ছিড়ে যায় কলিজে মোদের, কে হবে মোদের প্রবোধদাতা।
মাতা-পিতার মত মোদের করলেন যারা লালন পালন,
তাঁদের চরনে শ্রদ্ধা জানাই ভক্তি ভরে করি চুম্বন।
“আল-বিদা” “আচ্ছালাম”

বিদায়ী কাফেলা রতনপুর মাদ্রাসা

লোডিং হচ্ছে...